শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:২৩ অপরাহ্ন

নাফ নদীর জালিয়া দ্বীপের ২ বিজিবি’র পৃথক অভিযানে ৯৪হাজার ও ১২০পিস ইয়াবাসহ চার পাচারকারী আটক।

শহীদুল ইসলাম শাহেদ,টেকনাফ প্রতিনিধি
  • প্রকাশের সময়ঃ শনিবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৫
  • ৩১ প্রদর্শন করেছেন

নাফ নদীর গভীরে এবং জালীয়ারদ্বীপে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) দীর্ঘ ১৬ ঘন্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযানঃ তিন জন মাদক পাচারকারীসহ ৯৪,০০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার।

আজ আমরা আপনাদের সামনে কেবল একটি মাদকবিরোধী অভিযান নয়, বরং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং আগামী প্রজন্মকে মাদকের ভয়াল ছোবল থেকে বাঁচাতে বর্ডার গর্ড বাংলাদেশের অদম্য সংকল্পের কথা তুলে ধরতে উপস্থিত হয়েছি। টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) গত ২১ নভেম্বর ২০২৫ তারিখ পেশাদারিত্ব, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং দুর্দান্ত সাহসিকতায় একটি মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযানে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।

দীর্ঘদিন ধরে নাফ নদী ও এর তীরবর্তী অঞ্চলে অপরাধের যে বিষদাঁত প্রোথিত তা থেকে বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলটি ধীরে ধীরে আন্তঃসীমান্ত অপরাধ, মাদক চোরাচালান ও মানব পাচারের এক অন্ধকার অভয়ারণ্যে পরিণত হবার শঙ্কা তৈরি হয়। ফলে, এই বিষদাঁত ভেঙে দেওয়াই ছিল আমাদের প্রতিজ্ঞা। তাই, এই এলাকাকে সুরক্ষিত করতে এবং অপরাধীদের নিস্ক্রিয় করতে বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ২টি নতুন ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করা হচ্ছে। এছাড়াও, এই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে জালিয়ারদ্বীপে একটি টিওবি (Temporary Observation Post) স্থাপন করা হয়েছে। বিজিবি’র এই কঠোর ও দৃঢ় অবস্থানের প্রতিফলন হলো গত ২১ নভেম্বর ২০২৫ তারিখের প্রথম প্রহরে প্রযুক্তি ও মানব সম্পদের নিখুঁত সমন্বয়ে পরিচালিত দীর্ঘ ১৬ ঘন্টার রুদ্ধশ্বাস অপারেশন।

আনুমানিক ভোর ০৪০০ ঘটিকায়, যখন চারদিকে শুধু গভীর অন্ধকার, ঠিক তখনই আমাদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির চোখে মায়ানমারের দিক থেকে নাফ নদী দিয়ে সাঁতরে আসা দুই সন্দেহভাজনের গতিবিধি ধরা পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে সীমান্তে মোতায়েন আভিযানিক দল অত্যাধুনিক নৌ পেট্রোল ক্রাফট দ্বারা ক্ষিপ্রতার সাথে দ্রুত অ্যাকশনে যায়। এ সময় জালিয়ার দ্বীপের কাছাকাছি অংশের মাঝ নদীতে ৪৪,০০০ পিস ইয়াবাসহ একজন পাচারকারীকে মোঃ ইব্রাহিম(১৮), পিতাঃ নুর মোহাম্মদ, গ্রাম-পেরাম-প্রু, থানা-মংন্ডু, দেশ-মায়ানমারকে আটক করা হয়। কিন্তু অপরজন কৌশলে দ্বীপের গহীনে কেওড়া জঙ্গলে ঢুকে আত্মগোপন করে। কিন্তু আমাদের অভিযান থেমে থাকেনি, চৌকস সদস্যদের দ্বারা বেশ কিছু অভিযান দলকে নাফ নদীতে এবং দ্বীপের গহীন জঙ্গলে মোতায়েন করা হয়। অত্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশে আধুনিক প্রযুক্তি, কৌশল ও চরম ধৈর্য্যের সাথে পুরো দ্বীপটিকে ঘিরে রেখে দীর্ঘ সময় ধরে চলে চিরুনি তল্লাশি। অবশেষে, পলাতক মাদক কারবারী মোঃ জুনায়েদ(১৫), পিতাঃ নবী হোসেন, গ্রামঃ সোয়ে জার, জেলা-মংন্ডু, দেশ-মায়ানমার এবং মাদকের জন্য লুকিয়ে থাকা আরেক পাচারকারীকে আব্দুর রাজ্জাক(২০), পিতা-মৃত-হোসেন, গ্রাম-কেরানতলি, ৯ নং ওয়ার্ড, টেকনাফ ইউনিয়ন, থানা- টেকনাফ, জেলা- কক্সবাজারকে আটক করা সম্ভব হয়। দিনের শেষে, সর্বশেষ আটককৃত আসামির দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে, সন্ধ্যা আনুমানিক ১৮৩০ ঘটিকায় জালিয়ার দ্বীপের গহীন কেওড়া বাগানের ভেতরে গর্ত করে লুকিয়ে রাখা আরও ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) পিস ইয়াবা মাটির নিচ থেকে খুঁড়ে বের করা হয়। সর্বশেষ রাত্রি ২০০০ ঘটিকায় অভিযান সমাপ্ত হয়। আমাদের এই দীর্ঘ ১৬ ঘন্টার অভিযান প্রমাণ করে টেকনাফ ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের এক ইঞ্চি জায়গাও কোন অপরাধীর জন্যই নিরাপদ নয়।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ